চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি ২ জানুয়ারি: আধ্যাত্মিক নেতার গ্রেপ্তার নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে
চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদনের শুনানি আগামী ২ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে শুনানির দিন ধার্য থাকলেও চিন্ময় দাসের পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় বিচারক নতুন দিন নির্ধারণ করেন।
আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনা ও বিক্ষোভ
চিন্ময় দাসকে এর আগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জামিন না মঞ্জুর করে ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম কাজী শরীফুল ইসলাম কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। প্রিজন ভ্যান ঘিরে আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এ বিক্ষোভ পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে।
বিক্ষোভ চলাকালে আদালত সড়কে বেশ কিছু যানবাহন ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। পরে সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়।
যুক্তিবাদী সমাজের প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনার পর চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার ও জামিন প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। যুক্তিবাদী সমাজের একাংশ বিষয়টিকে আধ্যাত্মিকতা বনাম বাস্তবতার সংঘর্ষ হিসেবে তুলে ধরছে। তারা কটাক্ষ করে বলছে, যারা সবকিছুকে মোহ-মায়া ও মিথ্যা বলে প্রচার করেন, তারাই এখন আদালত ও আইনি প্রক্রিয়ার শরণাপন্ন হচ্ছেন।
তাদের প্রশ্ন, আধ্যাত্মিক শক্তি, মন্ত্র-তন্ত্র বা তাবিজ-কবচ দিয়ে যারা মানুষের সমস্যার সমাধান করেন বলে দাবি করেন, তারা কেন চিন্ময় দাসের এই সংকট নিরসনে এগিয়ে আসছেন না? কেন আধ্যাত্মিক উপায়ে মামলাটি মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না?
বিচারপ্রার্থীদের আস্থা এবং প্রশ্নবিদ্ধ আধ্যাত্মিকতা
চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারের পর ভারত ও বাংলাদেশে এ বিষয়টি আধ্যাত্মিক নেতা ও গুরুদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। সাধারণ মানুষের মনে তৈরি হচ্ছে দ্বিধা—তারা কি প্রকৃতপক্ষেই আধ্যাত্মিক শক্তিতে সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম, নাকি এই শক্তির দাবি কেবল মোহজালে আটকে রাখা একটি প্রচলিত বিশ্বাস?
চিন্ময় দাসের জামিন আবেদন নিয়ে পরবর্তী শুনানি ২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। তার পক্ষে আইনজীবীরা কিভাবে অবস্থান নেন, এবং এই ঘটনায় আধ্যাত্মিক ও বাস্তবিকতার তর্ক কোথায় গিয়ে পৌঁছায়, তা সময়ই বলে দেবে।