ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ইতিহাসে আরেকটি বড় মাইলফলক সংযোজন করল সেনাবাহিনী। অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিমের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে সীমান্ত নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে এবং অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়াতে ভারতের অস্ত্রভান্ডারে যোগ হল নতুন প্রজন্মের ‘সাবল ২০’ লজিস্টিক ড্রোন। এই অত্যাধুনিক ড্রোনটি একাধারে নজরদারি, লজিস্টিক সহায়তা এবং ত্রাণ কার্যক্রমে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
‘সাবল ২০’— ভারতীয় প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক
আইআইটি কানপুরের মেধা ও গবেষণার ফসল ‘সাবল ২০’ ড্রোনটি তৈরির দায়িত্ব পালন করেছে তাদের স্টার্টআপ EndureAir। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে কঠিন থেকে কঠিনতর ভূখণ্ডেও এটি অনায়াসে কাজ করতে পারে। ড্রোনটির টেন্ডেম রোটার কনফিগারেশন এবং বড় রোটারের ব্যবহার এটিকে অনন্য করেছে।
দুর্গম অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্ষমতা
‘সাবল ২০’ ড্রোনটি ২০ কেজি পর্যন্ত মালপত্র বহনে সক্ষম, যা তার ওজনের ৫০ শতাংশ। এটি শুধু পণ্য পরিবহনেই দক্ষ নয়, বরং উচ্চতা ও প্রতিকূল পরিবেশেও দক্ষতার সঙ্গে কাজ চালাতে পারে। উন্নত ভার্টিক্যাল টেক-অফ এবং ল্যান্ডিং (ভিটিওএল) প্রযুক্তির ফলে এটি উঁচু পর্বত বা রুক্ষ ময়দানে নির্বিঘ্নে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারে।
সীমান্ত নিরাপত্তা ও কার্যক্ষমতার শক্তিশালী হাতিয়ার
অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা LAC) বরাবর ভারতীয় সেনাবাহিনীর কার্যক্রমে ‘সাবল ২০’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
1. নজরদারি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: সীমান্তে নজরদারির পাশাপাশি শত্রুপক্ষের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
2. বিদ্রোহ বিরোধী অভিযান: বিদ্রোহ দমন বা সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবিলায় ড্রোনটির কার্যক্ষমতা সেনাবাহিনীর কৌশলগত সক্ষমতাকে বাড়াবে।
3. ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা: প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দুর্গম অঞ্চলে দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
স্টিলথ প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত
আইআইটি কানপুরের তৈরি মেটামেটেরিয়াল সারফেস ক্লোকিং সিস্টেম (MSCS) এর সংযোজন ড্রোনটির স্টিলথ ক্ষমতা বাড়িয়েছে। শত্রুপক্ষের নজর এড়িয়ে চলতে এবং সীমান্ত নজরদারিতে এটি কার্যকর হবে। এই প্রযুক্তির ফলে ড্রোনটি রাডার বা অন্যান্য নজরদারি সরঞ্জামের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে।
কৌশলগত এবং প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য
টেন্ডেম রোটার কনফিগারেশন: এটি ড্রোনটির ভারসাম্য এবং লোড বহনের ক্ষমতা বাড়ায়।
ভিটিওএল প্রযুক্তি: রুক্ষ ও সংকীর্ণ জায়গাতেও সহজে টেক-অফ ও ল্যান্ডিং সম্ভব।
উচ্চ দক্ষতা ও কম জ্বালানি খরচ: এটি দীর্ঘ সময় ধরে অপারেশন চালাতে সক্ষম।
সামরিক শক্তি বৃদ্ধির নতুন দিগন্ত
ভারতীয় সেনাবাহিনী কেবল শত্রুপক্ষ মোকাবিলার ক্ষেত্রেই নয়, বরং পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তায়ও নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। ‘সাবল ২০’-এর মতো প্রযুক্তি সংযোজন প্রমাণ করে, ভারত এখন কেবল অস্ত্র আমদানির উপর নির্ভরশীল নয়, বরং নিজস্ব প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়াতে সক্ষম।
কেন ‘সাবল ২০’ গুরুত্বপূর্ণ?
দুর্গম এলাকার জন্য উপযোগী: অরুণাচল ও সিকিমের মতো কঠিন ভূখণ্ডে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমকে সহজ করবে।
যুদ্ধক্ষেত্রের আধুনিকায়ন: সেনাবাহিনীর মিশন ও কার্যক্রমে প্রযুক্তিগত সুবিধা আনবে।
জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধি: দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা আরও সুরক্ষিত হবে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ‘সাবল ২০’ লজিস্টিক ড্রোন নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী সংযোজন। এর সাহায্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিজেদের অপারেশনাল সক্ষমতাকে বিশ্বমানে উন্নীত করছে। ভবিষ্যতে এর সফল প্রয়োগ দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নতুন অধ্যায় রচনা করবে।